সমিতির ইতিহাস

ভূমিকা :
বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী কল্যাণ সমিতি একটি সেবাধর্মী সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান। এই সমিতি বিভিন্ন কল্যাণমূখী কাজের মাধ্যমে অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক, স্বাস্থ্য ও বিনোদনমূলক প্রয়োজন মেটানোর উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সমিতি ও দেশের সকল জেলায় অবস্থিত শাখা সমিতিসমূহের মাধ্যমে এই সমিতি অর্ধশতাব্দীর অধিককাল দেশের অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী ও তাঁদের পরিবারের সেবা করে যাচ্ছে।

সমিতির ইতিহাস:
এ সমিতির যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৫৫ সালে। বিভিন্ন সূত্র ও পুরাতন রেকর্ডপত্র থেকে জানা যায় যে ১৯৫৫ সনের ৯ অক্টোবর তারিখে কয়েকজন উদ্যোগী পেনশনার তৎকালীন অবসরপ্রাপ্ত আই, সি, এস জনাব টি, আই, এম, নুরুন্নবী চৌধুরীর সভাপতিত্বে ঢাকায় ২নং আশেক লেনের কাজী বাড়িতে একটি সভার আয়োজন করেন। অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সমস্যাদি সমাধানের লক্ষ্যে এই সভায় ‘‘পেনশন হোল্ডারর্স এসোসিয়েশন, ইষ্ট পাকিস্তান’’ নামে প্রথম বারের মত এ সমিতি একটি কল্যাণমূলক সংস্থা হিসাবে আতœপ্রকাশ করে। এই সভায় তৎকালীন অবসরপ্রাপ্ত লেবার কমিশনার খান বাহাদুর এম, এ,ই,বি, মুর্শেদকে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং কো-অপারেটিভ সোসাইটির অবসরপ্রাপ্ত এসোসিয়েট রেজিস্ট্রার সৈয়দ লতাফত হোসেনকে সম্পাদক মনোনীত করে একটি কমিটি গঠিত হয়। পরের বৎসর ১৯৫৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তান সরকারের হোম (পলিটিক্যাল) ডিপার্টমেন্ট তাদের ২৪-১২-১৯৫৬ তারিখের ১৭৫৯১/১ পল নম্বর পত্রের মাধ্যমে এ সমিতিকে স্বীকৃতি প্রদান করে। অর্থাৎ ২৪/১২/১৯৫৬ তারিখ থেকে সমিতি একটি জাতীয় ভিত্তিক সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠান হিসাবে নিবন্ধীকৃত হয়।

সমিতির লোকবল কাঠামো:
সমিতিতে বর্তমানে চিকিৎসকসহ ৫২ জন কর্মচারীর একটি লোকবল কাঠামো রয়েছে। এর কিছু সংখ্যক লোকবল প্রশাসনিক শাখায় ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও টেকনোলজিষ্টসহ কিছু সংখ্যক লোকবল সমিতির চিকিৎসা কেন্দ্রে কর্মরত আছেন।

সমিতির নব নামকরণ :
১৯৬৪ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত সমিতির কার্যাবলীর কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য কোথাও পাওয়া যায় নি। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ২৭ আগষ্ট তারিখে ১৪১ নং সেগুনবাগিচা ঢাকায় জনাব হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয় । উক্ত সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সমিতির পুর্বনাম ‘‘গভর্নমেন্ট পেনশন হোল্ডারস্ এসোসিয়েশন’’ পরিবর্তন করে নতুন নাম ‘‘বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী সমিতি’’ রাখা হয় এবং এই সমিতি বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পত্র নং ২১৫/সেকশন (৪), তাং ১৫ নভেম্বর ১৯৭২ এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের স্বীকৃতি লাভ করে এবং ঐ বছরেই সমিতির পূর্বতন সংবিধান ও বিধিসমূহের কিছু পরিবর্তন ও সংশোধন করা হয়।

পূর্বের ধারাবাহিকতায় ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত সমিতির নামকরণ ছিল ‘‘বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী সমিতি’’। ১৯৭৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সাধারণ সভায় ‘কল্যাণ’ শব্দ যোগ করে সমিতির নামকরণ করা হয় ‘‘বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী কল্যাণ সমিতি’’। এই সংশোধিত নাম সমাজকল্যাণ অধিদপ্তর এর অনুমোদন লাভ করে। অদ্যাবধি সমিতি এই নামেই চলে আসছে।

সমিতির কার্যালয় :
১৯৮৩ থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত সমিতির অফিস ছিল তৎকালীন সভাপতি ডাঃ মোঃ ইব্রাহীমের বদান্যতায় যথাক্রমে সেগুনবাগিচাস্থ ডায়বেটিক হাসপাতালের একটি কামরায়, পরে শাহবাগের বারডেমের একটি কক্ষে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাধারণ সম্পাদকের বাসগৃহে সংরক্ষিত থাকতো।

১৯৯০ সালের শেষদিকে তৎকালীন তত্বাবধায়ক সরকার সমিতির নামে ঢাকায় সাত মসজিদ রোডে ১৮ কাঠার বর্তমান প্লটটি বরাদ্দ করেন। এই প্লট প্রাপ্তিতে যাদের অবদান ছিল তারা হচ্ছেন সর্বজনাব মরহুম কফিলউদ্দিন মাহমুদ, মরহুম কাজী আজহার আলী, মরহুম মোঃ মহবুব উজ জামান, মরহুম মোঃ সুলায়মান আলী, মরহুম শরীফুল ইসলাম, মরহুম এম এ রউফ এবং মরহুম মোঃ শরীফুল হক। লটারীর মাধ্যমে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে ঐ প্লটে সমিতির নতুন গৃহ নির্মাণ শুরু হয় এবং প্রথম পঞ্চম তলা ভবনটি বর্তমান রূপ লাভ করে। পরবর্তীতে সমিতির প্রাক্তন সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব মরহুম মোঃ মহবুব উজ জামান এর চেষ্টায় ২০০৭ সালে সদাশয় সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অর্থানুকূল্যে ‘‘হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা ও অবসর ভবন সম্প্রাসরণ’ নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সকল ভৌত সুবিধাসহ আর একটি ছয় তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।

সদাশয় সরকারের বদান্যতায় উত্তরায় ১৫ নম্বর সেক্টরে সমিতির নামে এক বিঘা জমি বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এই জমিতে একটি জেরিয়াট্রিক হাসপাতাল ও প্রবীণ নিবাস গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।

ঢাকা ব্যতীত দেশের প্রতিটি জেলা শহরে জেলা শাখা সমিতির অস্তিত্ব রয়েছে। কেন্দ্রীয় অফিস হতে এই সমস্ত শাখার মাধ্যমে দরিদ্র পেনশনারদের আর্থিক ও স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হয়।

সমিতি পরিচালনায় আর্থিক রূপরেখা :
বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী কল্যাণ সমিতি বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বাজেটভূক্ত একটি প্রতিষ্ঠান। সমিতির কল্যাণমূলক কাজের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রতি আর্থিক বছরে নির্দিষ্ট অংকের অর্থ প্রদান করে থাকে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ও সমাজ কল্যাণ পরিষদ হতে কিছু আর্থিক সহায়তা পাওয়া যায়। এই খাত সমূহ ব্যতীত সমিতির ভবন ভাড়া হতে কিছু পরিমান অর্থ পাওয়া যায় এবং মেয়াদী সঞ্চয় হতে লভ্যাংশ হিসেবে কিছু অর্থের সংকুলান হয়। প্রাপ্ত এ অর্থ দিয়েই সমিতির যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করা হয়। সরকারী সাহায্য ব্যতীত কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বা অন্যবিধ সহায়তা গ্রহণ করা হয়।